Ticker

6/recent/ticker-posts

৭ম শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় সৃজনশীল প্রশ্ন ১ম অধ্যায় উত্তরসহ

৭ম শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় সৃজনশীল প্রশ্ন ১ম অধ্যায় উত্তরসহ

৭ম শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় সৃজনশীল প্রশ্ন উত্তর ১ম অধ্যায় জানতে আজকের এই আর্টিকেলটি শেষ পর্যন্ত পড়ুন। আশা করি সপ্তম শ্রেণির পরীক্ষার্থীরা অনেক বেশি উপকৃত হবে। যারা ৭ম শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় সৃজনশীল প্রশ্ন উত্তর ১ম অধ্যায় খুঁজছিলেন তাদের জন্য আজকের এই আর্টিকেলটি।

৭ম শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় সৃজনশীল প্রশ্নঃ ১ (১ম অধ্যায়)

১৯৫২ সালে দুর্বার আন্দোলনের মধ্য দিয়ে বাংলা ভাষার দাবি সোচ্চার ও বলিষ্ঠ হয়। সাথে সাথে পূর্ববাংলার সর্বাধিকার আন্দোলনও দানা বাঁধে। একুশের চেতনা আমাদের রক্তে নতুন উন্মাদনা সৃষ্টি করে। বঞ্চনা আর অত্যাচারের বিরুদ্ধে মাথা তুলে দাঁড়ায় বাংলার সংগ্রামী ছাত্র-জনতা। শুরু হয় আন্দোলন। এ আন্দোলনকে দমাবার জন্য আন্দোলনের নেতা-কর্মীদের বন্দি করা হয়। চলে নির্যাতন। তবুও বাঙালি দমে যায়নি। এ আন্দোলন থেকে জন্ম নেয় বাঙালি জাতীয়তাবাদ। 


ক. বাংলাদেশের ভাষা দিবস কবে? 

খ. ভাষা আন্দোলনের মুখ্য কারণ কী? ব্যাখ্যা কর। 

গ. আমরা কেন ভাষা শহিদদের শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করব? বর্ণনা দাও। 

ঘ. বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন বাঙালি জাতীয়তাবাদের জন্ম দে, বক্তব্যটি সম্পর্কে তোমার মতামত দাও। 

৭ম শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তরঃ ১ (১ম অধ্যায়)

ক) বাংলাদেশের ভাষা দিবস ২১ ফেব্রুয়ারি।


খ) ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের মুখ্য কারণ পূর্ব পাকিস্তানের বাংলা ভাষাভাষী মানুষের দাবি মেনে না নিয়ে পশ্চিম পাকিস্তানের স্বল্পসংখ্যক মানুষের ভাষা উর্দুকে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা করতে চাওয়া। পূর্ব পাকিস্তানের লোকসংখ্যা বেশি ছিল এবং তাদের মাতৃভাষা ছিল বাংলা। পক্ষান্তরে, পশ্চিম পাকিস্তানের অল্প সংখ্যক মানুষের ভাষা ছিল উর্দু। তবুও পশ্চিম পাকিস্তানের শাসকগোষ্ঠী উর্দুকেই পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা করতে চাইলে পূর্ব বাংলার সাধারণ জনগণ উর্দুর সাথে বাংলাকেও পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা করার দাবি জানায়। কিন্তু তাদের এ দাবিকে উপেক্ষা করে পাকিস্তানের প্রতিষ্ঠাতা মুহাম্মদ আলী জিন্নাহ ১৯৪৮ সালের ২১ মার্চ ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে এক জনসভায় উর্দুকেই পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা হিসেবে ঘোষণা দেন। তখন পূর্ব বাংলার ছাত্র-জনতার মাধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয় । তারা সাথে সাথেই এ ঘোষণার বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু করে। 


গ) বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে ভাষা শহিদদের মহান আত্মত্যাগের জন্যই আমরা ভাষা শহিদদের শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করব। পূর্ব পাকিস্তানের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগোষ্ঠীর রাষ্ট্রভাষা বাংলা করার দাবিকে মেনে না নিয়ে পশ্চিম পাকিস্তানের শাসকগোষ্ঠী উর্দুকেই পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা করতে চাইলে পূর্ব পাকিস্তানের সাধারণ ছাত্র-জনতা তাদের বিরুদ্ধে ভাষা আন্দোলনের শুরু সূত্রপাত।

বাঙালি আন্দোলনকারীদের ঠেকাতে পুলিশ লাঠি চার্জ ও কাঁদানে গ্যাস ছুঁড়েও তাদের দমাতে পারেনি। পরবর্তীতে পুলিশ তাদের উপর গুলি চালাতে শুরু করে। ফলে সালাম, বরকত, রফিক, শফিক, জব্বারসহ আরও অনেক নাম না জানা ছাত্র-জনতা শহিদ হয়। যার ফলে দেশের সর্ব স্তরের মানুষ বিক্ষোভে ফেটে পড়ে। তারা দেশের বিভিন্ন স্থানে হরতাল পালন করতে থাকে। এসব গণআন্দোলন সরকারের জন্য বাধা হয়ে দাঁড়াল। শেষ পর্যন্ত সরকার বাঙালিদের দাবি মেনে নিতে বাধ্য হয় এবং ১৯৫৬ সালের সংবিধানে বাংলাকে পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা ঘোষণা দেয়। পূর্ব পাকিস্তানের বাঙালি ছাত্র-জনতার আত্মত্যাগের ফলাফলস্বরূপ আমরা আমাদের মাতৃভাষায় কথা বলতে পারছি।

বিশ্বের বুকে একটি আলাদা জাতি হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছি। আমাদের বাংলা ভাষা রাষ্ট্রভাষার মর্যাদা পাওয়ার পেছনে ভাষা শহিদদের অবদান অপরিসীম। তাই আমরা ভাষা শহিদদের সম্মান করব এবং তাদেরকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করবো। 


ঘ) ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন বাঙালি জাতীয়তাবাদের জন্ম দেয় বক্তব্যটি যৌক্তিক। কারণ, এ আন্দোলনের মাধ্যমেই বাঙালি জাতি তাদের অধিকার আদায়ে সচেতন হয়ে ওঠে।

১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের ফলস্বরূপ সরকার বাঙালিদের ভাষার দাবি মেনে নেয় এবং ১৯৫৬ সালের সংবিধানে বাংলা ভাষা পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করে। এর ফলে পূর্ব পাকিস্ত শনের বাঙালিরা বিশ্বের বুকে একটি আলাদা জাতি হিসেবে পরিচিতি লাভ করে। একটি আলাদা জাতি হিসেবে স্বীকৃতি পাবার পরে বাংলারমানুষ তারা তাদের অন্যান্য অধিকার আদায় করতে সচেতন হয়ে ওঠে। অধিকার আদায়ের জন্য তারা তাদের দাবি-দাওয়া সরকারের কাছে পেশ করতে থাকে, প্রয়োজনে আন্দোলন করে।

এভাবে একে একে তাদের সকল দাবি আদায়ের জন্য উদ্যোগী হয়। এর ফলস্বরূপ ১৯৫৪- র প্রাদেশিক পরিষদ নির্বাচনে জয়লাভ, ১৯৬২-র শিক্ষা কমিশনের রিপোর্টের বিরুদ্ধে আন্দোলন, ১৯৬৬-র ছয় দফা দাবি উত্থাপন, ১৯৬৯-র গণঅভ্যুত্থান, ১৯৭০-র নির্বাচনে জয়লাভ এবং ১৯৭১-র মুক্তিযুদ্ধ সংঘটিত হয় এসব আন্দোলনেরই প্রেক্ষিতে।

এভাবে আমরা স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র বাংলাদেশ গড়তে সক্ষম হই। বিশ্বের বুকে একটি স্বতন্ত্র জাতি হিসেবে পরিচিতি লাভ করি। বাঙালি জাতির সকল প্রকার জাগরণের মূলে বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন কাজ করে। বাঙালি জাতীয়তাবাদের জন্মের পেছনে বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনের ভূমিকা অপরিসীম। 

আরও পড়ুনঃ

৭ম শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় সৃজনশীল প্রশ্নঃ ২ (১ম অধ্যায়)

১৯৫৪ সালের ১০ই মার্চ পাকিস্তানের সাধারণ নির্বাচনে পূর্ববঙ্গে যুক্তফ্রন্ট সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে সরকার গঠন করে। যুক্তফ্রন্টের এ জয়ের পেছনে ছিল বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন ও ছাত্রদের বিরাট ভূমিকা। যুক্তফ্রন্টের বিজয়কে তখন 'ব্যালট বিপ্লব' বলে আখ্যায়িত করা হয়। কিন্তু পাকিস্তান শাসকগোষ্ঠী বাঙালির এই বিজয়কে স্বাভাবিকভাবে মেনে নিতে পারেনি। মাত্র আড়াই মাসের মধ্যে ৩০ শে মে কেন্দ্রীয় সরকারের নির্দেশে মন্ত্রিসভা ভেঙে দিয়ে রাষ্ট্রপতি শাসন জারি করা হয়। 

ক. ১৯৪৮ সালে পাকিস্তান রাষ্ট্রে বাঙালির সংখ্যা কত ছিল? 

খ. ১৯৫৪ সালের প্রাদেশিক নির্বাচনে মুসলিম লীগের চরম পরাজয়ের কারণ লেখ। 

গ. যুক্তফ্রন্টের বিজয়কে 'ব্যালট বিপ্লব' বলে আখ্যায়িত করা হয় কেন? ব্যাখ্যা কর। 

ঘ. ‘যুক্তফ্রন্টের জয়ের পেছনে ছিল বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন ও ছাত্রদের বিরাট ভূমিকাও কথাটির যথার্থতা যাচাই কর।

৭ম শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তরঃ ২ (১ম অধ্যায়)

ক) ১৯৪৮ সালে পাকিস্তান রাষ্ট্রে বাঙালির সংখ্যা ছিল ৪ কোটি ৪০ লাখ।

 

খ) ১৯৫৪ সালের প্রাদেশিক পরিষদ নির্বাচনে মুসলিম লীগের চরম পরাজয় ঘটে। ক্ষমতাসীন মুসলিম লীগের দুঃশাসন, দুর্নীতি, শোষণ ও পাকিস্তানের দুই অংশের বৈষম্য ইত্যাদি নানা কারণে সাধারণ মানুষ তাদের উপর চরম ক্ষুব্ধ ছিল। এ নির্বাচনে মুসলিম লীগের প্রতিদ্বন্দ্বী দল ছিল যুক্তফ্রন্ট। এ দলের ২১ দফা কার্যক্রম ছিল বাঙালি জনগণের স্বার্থ রক্ষার দাবি। বাঙালি জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতিচ্ছবি এই ২১ দফা দাবির কারণে বাঙালি জনগণ যুক্তফ্রন্টের উপর আস্থা এনেছিল। এছাড়াও মুসলিম লীগের গণবিচ্ছিন্ন নেতা কর্মীরা যুক্তফ্রন্টের কর্মীদের ব্যাপক নির্বাচনী প্রচারাভিযানের কারণে জনগণের সমর্থন পেতে ব্যর্থ হয়। যার কারণে ১৯৫৪ সালের প্রাদেশিক পরিষদ নির্বাচনে মুসলিম লীগের চরম পরাজয় ঘটে। 


গ. ১৯৫৪ সালের নির্বাচনে ১৬টি দল অংশ নিলেও মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয় যুক্তফ্রন্ট ও মুসলিম লীগের মধ্যে। কয়েকটি রাজনৈতিক দল নিয়ে গঠিত হয়েছিল যুক্তফ্রন্ট। এ দলগুলোর মধ্যে ছিন্ত আওয়ামী মুসলিম লীগ, কৃষক শ্রমিক পার্টি, নেজামে ইসলাম এবং গণতন্ত্রী দল।

এ নির্বাচনে ক্ষমতাসীন মুসলিম লীগের চরম পরাজয় ঘটে । যুক্তফ্রন্ট সংখ্যাগরিষ্ঠ আসন পেয়ে এ নির্বাচনে জয়ী হয়। পূর্ব বাংলা আইন পরিষদ নির্বাচনে ৩০৯টি আসনের মধ্যে যুক্তফ্রন্ট ২৩৬ আসন পেয়ে সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে। আওয়ামী মুসলিম লীগ তাদের জন্য বরাদ্দকৃত ১৪৩টি আসনের মধ্যে সব কয়টি আসন লাভ করে জনপ্রিয়তার প্রমাণ দেয়। পক্ষান্ত


 ঘ. 'যুক্তফ্রন্টের জয়ের পেছনে ছিল বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন ও ছাত্রদের বিরাট ভূমিকা'। কথাটি যথার্থ। কারণ, ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের মাধ্যমেই বাঙালি জাতি তাদের অধিকার আদায়ের জন্য সচেতন হয়ে ওঠে। 

পূর্ব পাকিস্তানের প্রতি নানা রকম বৈষম্যমূলক আচরণ করাই ছিল মুসলিম লীগের প্রতি বাঙালি জনগণের ক্ষুব্ধ হবার মূল কারণ। এ ক্ষোভ আন্দোলনে পরিণত হয় বাংলা ভাষার প্রশ্নে পূর্ব পাকিস্তানকে অবহেলা করার কারণে। সংখ্যাগরিষ্ঠ পূর্ব পাকিস্তানের বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবি মেনে না নিয়ে উর্দুকে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা করতে চাইলে ১৯৫২ সালে পূর্ব পাকিস্তানের ছাত্র-জনতা পাকিস্তান শাসকগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু করে।

এ আন্দোলনে অনেক বাঙালি শহীদ হয়। এতে বাংলার জনগণ আরো ক্ষুব্ধ হয়ে তাদের আন্দোলন আরো তীব্রতর করে তোলে। তখনই বাঙালি জাতির দাবি আদায়ের জন্য যুক্তফ্রন্ট গঠিত হয়। যুক্তফ্রন্টের ২১ দফা কর্মসূচি বাঙালি জাতির আশা- আকাঙ্ক্ষার প্রতিচ্ছবিতে পরিণত হয়। যুক্তফ্রন্ট গঠনের পর সাধারণ জনগণ তাদের অধিকার আদায়ে আরো বেশি সোচ্চার হয়ে উঠে।

যুক্তফ্রন্ট সাধারণ মানুষের পক্ষে কাজ করলে জনগণ তাদের উপর আশাবাদী হয় এবং এর ফলস্বরূপ ১৯৫৪ সালের নির্বাচনে যুক্তফ্রন্ট সংখ্যাগরিষ্ঠ আসনে জয়ী হয়। তাই বলা যায়, যুক্তফ্রন্টের জয়ের পেছনে বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন ও ছাত্রদের বিরাট ভূমিকা রয়েছে। 

৭ম শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় সৃজনশীল প্রশ্নঃ ৩ (১ম অধ্যায়)

ভাষা আন্দোলনের পটভূমিতে এবং মুসলিম লীগ নেতাদের অগণতান্ত্রিক মনোভাব ও সরকারি নীতির প্রতিবাদে ১৯৪৯ সালের ২৩ জুন ঢাকায় আওয়ামী মুসলিম লীগ নামে একটি রাজনৈতিক দলের জন্ম হয়। ১৯৫৪ সালে মুসলীম লীগ বাংলাদেশের বিলম্বিত সাধারণ নির্বাচন ঘোষণা করে। ক্ষমতাসীন দলের সাথে নির্বাচনে মোকাবিলা করার উদ্দেশ্যে কয়েকটি বিরোধী রাজনৈতিক দল যুক্তফ্রন্ট গঠন করে। পূর্ব বাংলার জনগণ যুক্তফ্রন্টের ২১ দফার প্রতি অকুণ্ঠ সমর্থন জানায়। যুক্তফ্রন্ট মন্ত্রিসভা ১৯৫৪ সালের ৩০ মে ভেঙে দেয়া হয়। 


ক. যুক্তফ্রন্ট প্রথম কোন প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করে? 

খ. আওয়ামী মুসলিম লীগ কেন প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল? 

গ. ১৯৫৪ সালের নির্বাচনের পটভূমি তুমি কীভাবে বর্ণনা করবে? 

ঘ. ১৯৫৪ সালের প্রাদেশিক পরিষদের নির্বাচনে যুক্তফ্রন্টের প্রধান পাঁচটি দফা উল্লেখ কর। এ নির্বাচনের ফলাফল ও তাৎপর্য মূল্যায়ন কর। 

৭ম শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তরঃ ৩ (১ম অধ্যায়)

ক) যুক্তফ্রন্ট প্রথম নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করে।


খ) পাকিস্তান সৃষ্টির সাথে সাথে কেন্দ্রীয় অবাঙালি ‘মুসলিম লীগ' নেতৃবৃন্দ বাঙালিদের ওপর উর্দু ভাষাকে চাপিয়ে দেয়ার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হওয়ায় ভাষা আন্দোলনকে সুগঠিতভাবে পরিচালনার উদ্দেশ্যে নতুন রাজনৈতিক দল 'আওয়ামী মুসলিম লীগ' গঠিত হয়। 


গ) ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান প্রতিষ্ঠালাভের পর পাকিস্তানের উভয় প্রাদেশিক আইন পরিষদে নির্বাচন হওয়ার কথা ছিল ১৯৫১ সালে। কিন্তু ১৯৪৯ সালের ৪ এপ্রিল টাঙ্গাইলের উপ-নির্বাচনে শোচনীয়ভাবে পরাজয় হওয়ায় ক্ষমতাসীন মুসলিম লীগ সরকার নির্বাচনে হেরে যাওয়ার ভয়ে ভীত হয়ে ১৯৫১ সালে পূর্ববঙ্গ প্রাদেশিক আইনসভার নির্বাচন করতে সাহস পায় নি।

পরবর্তীতে ভাষা আন্দোলনের পর পূর্ব বাংলার সংগ্রামী জনতার আন্দোলনের চাপে বাধ্য হয়ে ১৯৫৪ সালের ১১ মার্চ পূর্ববঙ্গ আইন পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠানের কথা ঘোষণা করতে সরকার বাধ্য হয়। এ নির্বাচনে যুক্তফ্রন্টের বিপুল বিজয় বাংলার জনগণকে স্বাধীকার আন্দোলনের ক্ষেত্রে আরও এক ধাপ এগিয়ে নিয়ে যায়।

যুক্তফ্রন্টের এ বিজয়ে কেন্দ্রীয় সরকার আতঙ্কিত হয়ে পড়ে এবং এ সরকারকে উৎখাত করতে নানামুখি ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়। 


ঘ) মুসলিম লীগ সরকার বারবার পূর্ব বাংলার সাধারণ নির্বাচনের তারিখ পেছাতে থাকে। অবশেষে ১৯৫৪ সালের মার্চ মাসে প্রাপ্তবয়স্কদের ভোটাধিকারের ভিত্তিতে পূর্ব বাংলায় সাধারণ নির্বাচনের কথা ঘোষণা করেন।

১৯৫৪ সালের সাধারণ নির্বাচনে মুসলিম লীগের মোকাবিলা করার জন্য বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো একটি যুক্তফ্রন্ট গঠন করে। যুক্তফ্রন্টের ২১ দফা কর্মসূচি : যুক্তফ্রন্ট পূর্ব বাংলার গণমানুষের আশা- আকাঙ্ক্ষাকে প্রতিফলিত করে ২১ দফা ভিত্তিক নির্বাচনি ইশতেহার প্রণয়ন করে। যুক্তফ্রন্ট এ কর্মসূচির ভিত্তিতে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে।


এ দফাগুলোর মধ্যে পাঁচটি দফা হলো : 

১. বাংলাকে অন্যতম রাষ্ট্রভাষা করা; 

২. বিনা ক্ষতিপূরণে জমিদারি প্রথা উচ্ছেদ করা;

৩. পাট ব্যবসায় জাতীয়করণ করা; 

৪. সমবায় কৃষি ব্যবস্থা প্রবর্তন করা; 

৫. পূর্ব পাকিস্তানে লবণ শিল্প প্রতিষ্ঠা করা। 


নির্বাচনের ফলাফল ও তাৎপর্য : যুক্তফ্রন্ট প্রণীত ২১ দফা ছিল মূলত পূর্ব বাংলার জনগণের স্বায়ত্তশাসনের দাবি, যে কারণে পূর্ব বাংলার জনগণ যুক্তফ্রন্টের ২১ দফার প্রতি অকুণ্ঠ সমর্থন ব্যক্ত করে। ফলে ১৯৫৪ সালের মার্চ মাসে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে মুসলিম লীগ শোচনীয়ভাবে পরাজয় বরণ করে। পক্ষান্তরে যুক্তফ্রন্ট বিপুল সংখ্যাধিক্য লাভ করে। এ নির্বাচনে পূর্ব বাংলার আইন পরিষদের ৩০৯টি আসনের মধ্যে যুক্তফ্রন্ট ২৩৬টি এবং মুসলিম লীগ মাত্র ৯টি আসন লাভ করে। মুসলিম লীগের ষড়যন্ত্রের রাজনীতি, বৈষম্য ও নির্যাতনমূলক নীতির পরিণামে পূর্ব বাংলার জনগণ মুসলিম লীগের প্রতি মোহভঙ্গ ঘটে। মুখ্যমন্ত্রী নূরুল আমিনসহ সকল প্রাদেশিক মন্ত্রী এ নির্বাচনে শোচনীয়ভাবে পরাজয় বরণ করেন। এ নির্বাচন প্রমাণ করে যে, পূর্ব বাংলার জনগণ স্বায়ত্তশাসন ও স্বাধিকারের প্রশ্নে 'ঐক্যবদ্ধ'। 

৭ম শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় সৃজনশীল প্রশ্নঃ ৪ (১ম অধ্যায়)

সোহানের দাদা মুক্তিযোদ্ধা। সোহান তার দাদার নিকট মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত ইতিহাস জানতে চায়। মুক্তিযোদ্ধা দাদা সোহানকে বললেন, পাকিস্তান রাষ্ট্রের সৃষ্টির পর পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী বাংলার মানুষদের আপন করে না নিয়ে তারা শোষকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়। তারা রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, প্রশাসনিক, সামরিক, শিক্ষা ও সংস্কৃতি সর্বক্ষেত্রেই পাকিস্তানের দুই অংশের মধ্যে বৈষম্য সৃষ্টি করে এবং বাঙালিদের দাবিয়ে রাখতে চেষ্টা করতো বাঙালিরা এ বৈষম্যের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে এর অবসান ঘটায়। 


ক. পূর্ব পাকিস্তান আইন পরিষদে মোট আসন ছিল কতটি? 

খ. ফেব্রুয়ারি কেন আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করে? 

গ. ‘পূর্ব পাকিস্তান অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে পশ্চিমা শাসকগোষ্ঠীর বৈষম্যের শিকার হয়েছে- কথাটি উদ্দীপক ও পাঠ্য পুস্তকের আলোকে ব্যাখ্যা কর। ঘ. পশ্চিমা শাসকগোষ্ঠীর বৈষম্যের জবাবে বাঙালি জাতির প্রতিক্রিয়া বিশ্লেষণ কর। 

৭ম শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তরঃ ৪ (১ম অধ্যায়)

ক) পূর্ব পাকিস্তান আইন পরিষদ নির্বাচনে মোট আসন ছিল ৩০৯টি। 


খ)  বাংলা ভাষার জন্য বাঙালিদের আত্মত্যাগের কথা স্মরণ করে ১৯৯৯ সালে ভাষা আন্দোলন আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি লাভ করে। ঐ বছর ১৭ নভেম্বর ইউনেস্কো ২১ ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসাবে ঘোষণা দেয়। 

তাই এখন প্রতি বছর ২১ ফেব্রুয়ারি পৃথিবীর সকল জাতি নিজ নিজ মাতৃভাষাকে বিশেষ সম্মান জানিয়ে স্মরণ করে। সেই সাথে স্মরণ করে ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারির কথাও। পৃথিবীতে বাঙালি জাতি ছাড়া আর অন্য কোন জাতি ভাষার জন্য নিজেদের জীবন উৎসর্গ করেনি। তাদের এ আত্মত্যাগের স্মরণে ২১ ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক ভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়। 


গ) পূর্ব পাকিস্তান অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে সর্বদা পশ্চিম পাকিস্তানের বৈষম্যের শিকার হয়েছিল। স্বাধীনতার পূর্বে কেন্দ্রীয় ব্যাংকসহ সকল ব্যাংক, বীমা, বাণিজ্য, শিল্প প্রতিষ্ঠানের প্রধান অফিস পশ্চিম পাকিস্তানে ছিল।

পূর্ব পাকিস্তান বৈদেশিক মুদ্রা বেশি আয় করলেও শতকরা মাত্র ২১ ভাগের বেশি অর্থ পূর্ব পাকিস্তানে বরাদ্দ দেয়া হয়নি। বৈদেশিক সাহায্যের শতকরা ৩৪ ভাগের বেশি পূর্ব পাকিস্তান কখনো পায়নি। অথচ ঋণের বোঝা বাঙালিদের বহন করতে হতো। এক্ষেত্রে বিদেশ থেকে যা আমদানি করা হতো তার মাত্র ৩১ শতাংশ পূর্ব পাকিস্তানের উন্নয়ণ খাতের জন্য বরাদ্দ ছিল। পূর্ব পাকিস্তানের উন্নয়নের জন্য কম অর্থ বরাদ্দ হওয়ায় এখানে উন্নয়ন তেমন হয়নি। অথচ আমাদের টাকায়ই পশ্চিম পাকিস্ত নিকে উন্নত করে গড়ে তোলা হয়।

রপ্তানি আয়ের ২০০০ মিলিয়ন ডলার পাকিস্তান আমলে পূর্ব পাকিস্তান থেকে পশ্চিম পাকিস্তানে পাচার হয়েছিল। এভাবে পূর্ব পাকিস্তান অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে নানাভাবে পশ্চিমা শাসকগোষ্ঠীর বৈষম্যের শিকার হয়েছিল। 


ঘ. পূর্ববাংলার জনগণ সব সময় প্রতিক্রিয়াশীল জাতি। কোনো অন্যায়, অত্যাচার তারা বিনা প্রতিবাদে মেনে নেয়নি। যুগে যুগে লড়াকু জাতি হিসেবে বাঙালিরা শোষক ও অত্যাচারীদের বিরুদ্ধে অস্ত্র এবং সংগ্রামের ধারাবাহিকতায় পাকিস্তানি সরকারের বৈষম্যমূলক আচরণের বিরুদ্ধে ভাষা আন্দোলনের মধ্য দিয়ে ধরেছে আন্দোলন এবং সংগ্রামের ধারাবাহিকতায় পাকিস্তানি সরকারের বৈষম্যমূলক আচরণের বিরুদ্ধে ভাষা আন্দোলনের মধ্য দিয়ে পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে বাঙালি গর্জে উঠে।


শুরু হয় আন্দোলনের সূত্রপাত। এরপর আইয়ুব খানের সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে ছাত্ররা শিক্ষা আন্দোলনের মাধ্যমে আইয়ুব বিরোধী তৎপরতা চালায়। পুরো ষাটের দশক জুড়ে চলে সাংস্কৃতিক স্বাধিকারের আন্দোলন। ১৯৬৬ সালে ৬ দফার মাধ্যমে বৈষম্য দূরীকরণে বাঙালিরা নিজেদের দেশ চালানোর পরিকল্পনা পেশ করে। বাঙালিদের এ দাবি পশ্চিমা শাসকশ্রেণি প্রত্যাখ্যান করলে শুরু হয় ছাত্রদের ৬ দফা ও ১১ দফা-ভিত্তিক যৌথ আন্দোলন। এরপর গণআন্দোলনের চাপে আইয়ুব খান পদত্যাগে বাধ্য হন।


১৯৭০ সালের নির্বাচনে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করে। কিন্তু পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী ক্ষমতা হস্তান্তরে কালক্ষেপণ করতে থাকে। এরপর ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী নিরস্ত্র বাঙালির ওপর অতর্কিত হামলা চালায়। বাঙালিরাও এর প্রতিবাদে রুখে দাঁড়ায়। শুরু হয় মুক্তিযুদ্ধ।


শেষ পর্যন্ত ১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বর বিজয় অর্জনের মাধ্যমে পাকিস্তানিদের ২৪ বছরের শোষণ আর বৈষম্যের অবসান ঘটায় বাঙালি জাতি। সুতরাং, উদ্দীপকের আলোকে বলা যায়, বাঙালি অন্যায়, অত্যাচার এবং বৈষম্যের বিরুদ্ধে প্রতিক্রিয়াশীল জাতি হিসেবে ইতিহাসে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করেছে। 

৭ম শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় সৃজনশীল প্রশ্নঃ ৫ (১ম অধ্যায়)

১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থান পাকিস্তানের রাজনৈতিক ইতিহাসে এক ঐতিহাসিক গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী বিভিন্ন ক্ষেত্রে বৈষম্যমূলক নীতি গ্রহণ করায় পূর্ব-পাকিস্তানের মানুষ ১৯৬৯ সালে এক গণঅভ্যুত্থানের সূচনা করে। গণঅভ্যুত্থানের ফলস্বরূপ বাঙালি জাতির ওপর নেমে আসে এক নির্মম অত্যাচার। সকল অত্যাচার সহ্য করে বাঙালিরা ক্রমশ এগুতে থাকে স্বাধীনতার পথে। তাদের চাই আলাদা ভূখণ্ড। ১৯৭০ এর নির্বাচনে তা পরিষ্কার রূপে ধরা পড়ে। মূলত এ নির্বাচনের ফলস্বরূপ আজ বাংলাদেশ স্বাধীন। 


ক. কত সালে বাঙালি প্রথম সরকার গঠনের সুযোগ পায়? 

খ. ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য কী ছিল? 

গ. উদ্দীপকে উল্লিখিত নির্বাচন তোমার মনে কী ধরনের প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে? 

ঘ. “উদ্দীপকের-নির্বাচন-স্বাধীন-বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার-পথ-প্রশস্ত-করে"- মূল্যায়ন-কর।  

৭ম শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তরঃ ৫ (১ম অধ্যায়)

ক) ১৯৫৪-সালে-বাঙালি প্রথম-সরকার-গঠনের-সুযোগ-পায়। 


খ) ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যসমূহ হলো: পূর্ব বাংলার স্বায়ত্তশাসন প্রতিষ্ঠা করা; সামরিক, বেসামরিক আমলাতন্ত্রের কর্তৃত্ব হ্রাস; পাকিস্তানের উভয় অংশের মধ্যে বিরাজমান বৈষম্য দূরীকরণ; গণতন্ত্রের পূর্ণ বাস্তবায়ন; সর্বস্তরের গণবিরোধ এবং অশুভ শক্তির মূলোৎপাটন ও সকল মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার এবং রাজবন্দিদের মুক্তি। 


গ. উদ্দীপকে উল্লিখিত নির্বাচনটি হচ্ছে ১৯৭০ সালের নির্বাচন। বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে ১৯৭০-এর নির্বাচন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। বস্তুতপক্ষে, এ নির্বাচনেই পাকিস্তানের রাজনৈতিক মৃত্যু ঘটে এবং পাকিস্তানি জাতীয়তাবাদের ধারণা বিপর্যস্ত হয়।

পাকিস্তানের শাসকচক্র নির্বাচনের ফল মেনে না নেওয়ায় পাকিস্তান তার ক্রান্তিকালে উপনীত হয়। ১৯৭০ সালের নির্বাচনে বিজয়ের ফলে বাঙালি জাতীয়তাবোধে উদ্বুদ্ধ জনগণ উল্লাসিত হয় এবং তারা আত্মশক্তিতে বলীয়ান হয়ে ওঠে। এ নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে বাঙালি জাতি প্রথমবারের মতো নিজেদের সংহত শক্তি পরিমাপ করার সুযোগ লাভ করে।

পাকিস্তানের শাসকগোষ্ঠী ১৯৭০ সালের নির্বাচনের ফলাফল মেনে যদি আওয়ামী লীগের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করা হতো তাহলে পাকিস্তানের ইতিহাস হয়তো অন্যরকম হতে পারতো। আসলে ১৯৭০ সালের নির্বাচন ছিল অখণ্ড পাকিস্তানে সর্বশেষ সুযোগ। 


ঘ. উদ্দীপকে উল্লিখিত নির্বাচনটি হচ্ছে ১৯৭০ সালের নির্বাচন। বস্তুত ১৯৭০ সালের নির্বাচনের মাধ্যমেই বাঙালিরা প্রথমবারের মতো আত্মপ্রতিষ্ঠার ও স্বায়ত্তশাসনের সুযোগ লাভ করে।

কিন্তু শাসকগোষ্ঠীর ক্ষমতা হস্তান্তরের টালবাহানার কারণে স্বায়ত্তশাসনের পরিবর্তে বাংলাদেশ স্বাধীন রাষ্ট্রে পরিণত হলো। এ নির্বাচন মূলত আওয়ামী লীগের ছয় দফা কর্মসূচির ভিত্তিতে অনুষ্ঠিত হয়েছিল। ছয় দফা ছিল বাঙালির মুক্তির সনদ। তাই বাংলার জনগণ একচেটিয়াভাবে আওয়ামী লীগকে ভোট দিয়ে ছয় দফার প্রতি অকুণ্ঠ সমর্থন জানায়। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে সাড়া দিয়ে জনগণ স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে ঝাপিয়ে পড়ে।

পূর্ব বাংলার কৃষক, শ্রমিক, সরকারি কর্মচারী ছাত্রজনতা বিক্ষোভ মিছিলসহ রাস্তায় আসে। প্রথমে শুরু হয় অসহযোগ আন্দোলন এবং পড়ে শুরু হয় মুক্তি নেমেদাখিল সপ্তম শ্রোণ সংগ্রাম। অতঃপর ১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বর ত্রিশ লক্ষ বাঙালির প্রাণ এবং অসংখ্য মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে পৃথিবীর মানচিত্রে নতুন একটি দেশ হিসেবে বাংলাদেশের অভ্যুদয় ঘটে। ১৯৭০ সালের নির্বাচনের মধ্য দিয়েই বাঙালিদের সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রমাণিত হয় আর এর ফলে পাকিস্তানি শাসকদের শোষণমূলক মনোভাব প্রকাশ পায়।

এ নির্বাচনে জয়লাভ করে বাঙালিরা দৃঢ় আত্মপ্রত্যয় নিয়ে স্বাধীনতা আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়ে। অবশেষে ঘাত-প্রতিঘাত উপেক্ষা করে নিজেদের স্বাধীন জাতি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। তাই বলা যায় ১৯৭০ সালের নির্বাচন বাংলাদেশের স্বাধীনতার পথ প্রশস্ত করে দিয়েছিল। 

৭ম শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় সৃজনশীল প্রশ্নঃ ৬ (১ম অধ্যায়)

লাহোর প্রস্তাবের ভিত্তিতে পাকিস্তান রাষ্ট্রের জন্ম হলেও পূর্ব বাংলা লাহোর প্রস্ত বিভিত্তিক পৃথক রাষ্ট্রের মর্যাদা তো পায়ই নি, বরং পাকিস্তান রাষ্ট্রের সূচনালগ্ন থেকেই পশ্চিম পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী পূর্ব বাংলাকে তাদের উপনিবেশ হিসেবে ভাবতে শুরু করে এবং ঔপনিবেশিক কায়দায় শোষণ আরম্ভ করে। এ শোষণের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের মধ্য দিয়ে পূর্ব বাংলার জাতীয়তাবাদী আন্দোলন দানা বাঁধতে থাকে। বাঙালিরা আঞ্চলিক স্বায়ত্তশাসনের দাবিতে দীর্ঘ ২৪ বছর আন্দোলন সংগ্রাম চালিয়ে যেতে থাকে। এ সুদীর্ঘ সময়ে পশ্চিম পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী রাজনৈতিক, প্রশাসনিক, সামরিক, শিক্ষা ও সংস্কৃতির ক্ষেত্রে পূর্ব বাংলার প্রতি বৈষম্য ও নিপীড়নমূলক নীতি অনুসরণ করে। শাসকগোষ্ঠীর এ বৈষম্য ও নিপীড়নমূলক নীতির বিরুদ্ধে পূর্ব বাংলার জনগণ প্রথমে প্রতিবাদী আন্দোলন এবং শেষ পর্যন্ত স্বাধিকার ও স্বাধীনতা আন্দোলনের সূচনা করে। 


ক. পূর্ব-পাকিস্তানে কত কোটি বাঙালি ছিল? 

খ. পশ্চিম-পাকিস্তান কর্তৃক পূর্ব পাকিস্তানের প্রতি সাংস্কৃতিক বৈষম্য কীরূপ ছিল? 

গ. পশ্চিম-পাকিস্তানের বৈষম্যের বিরুদ্ধে তোমার প্রতিক্রিয়া কীরূপ হতো? বর্ণনা কর। 

ঘ. “বাংলাদেশের-অভ্যুদয়ে-পাকিস্তান আমলের-অর্থনৈতিক-বঞ্চনাই-দায়ী”- উক্তিটির-যথার্থতা-মূল্যায়ন-কর। 

৭ম শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তরঃ ১ (২য় অধ্যায়)

ক) পূর্ব-পাকিস্তানে ৪ কোটি ৪০ লাখ বাঙালি ছিল। 


খ) একটি জাতির নিজস্ব সংস্কৃতি হচ্ছে ঐ জাতির সবচেয়ে বড় পরিচয়। পাকিস্তান জন্মের পর থেকেই বাংলার ভাষা, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি ধ্বংস করতে পাকিস্তানি সামরিক শাসকরা তৎপর হয়ে ওঠে। ১৯৪৮ সালে জোরপূর্বক উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে। ১৯৫৬ সালের সংবিধানে বাংলা ভাষাকে পাকিস্তানের দ্বিতীয় ভাষা হিসেবে গ্রহণ করা হলেও বাংলা ভাষার বিরুদ্ধে চক্রান্ত থেমে থাকেন। এ সময় পূর্ব বাংলার নাম পূর্ব-পাকিস্তান করা হয়। রোমান হরফে বাংলা লেখার চেষ্টা অব্যাহত থাকে। চলচ্চিত্র, নাটক, পত্রিকা, বই প্রকাশে সীমাহীন নিয়ন্ত্রণ ছাড়াও রবীন্দ্র সংগীত প্রচার বন্ধ এবং বাংলা নববর্ষ উদযাপন নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। এভাবে বাঙালির সকল সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে পশ্চিম পাকিস্তানিরা বৈষম্য সৃষ্টি করে। 


গ) বাঙালি লড়াকু জাতি। ব্রিটিশ আমল থেকেই বাঙালি অন্যায়ের প্রতিবাদ করেছে। বাঙালির বিরুদ্ধে পাকিস্তান সরকারের বৈষম্যমূলক আচরণও বাঙালি জাতি কখনো মুখ বুজে সহ্য করে নেয়নি। পাকিস্ত নিদের উপযুক্ত জবাব দেবার নিমিত্তে বাঙালিরা ভাষা আন্দোলনের সূচনা করে। ভাষা আন্দোলন ছিল পশ্চিম পাকিস্তানিদের বিরুদ্ধে প্রথম বিজয়। আমি যদি তৎকালীন বাঙালি নাগরিক হতাম পাকিস্তানিদের বিরুদ্ধে আমার প্রতিক্রিয়া হতো চরম ক্ষোভ ও ঘৃণার।


উপযুক্ত আন্দোলনের মাধ্যমে তাদের বৈষম্যের চরম জবাব দেওয়ার জন্য সর্বদা ব্রতী থাকতাম। আইয়ুব খানের সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে আমি শিক্ষা আন্দোলনের মাধ্যমে আইয়ুববিরোধী আন্দোলনে যোগ দিতাম। এছাড়াও সাহিত্য সম্মেলন, সাংস্কৃতিক আন্দোলনে যোগ দিতাম।


ছায়ানট নামক সাংস্কৃতিক সংগঠনে যোগ দিয়ে বাংলা সংগীত চর্চা ও উৎসব পালনের মাধ্যমে সাংস্কৃতিক আন্দোলনকে বেগবান করতাম আর ৬ দফা ও ১১ দফা যৌথ আন্দোলনে যোগ দিতাম। সর্বশেষ মহান মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণের মাধ্যমে পাকিস্তানি বৈষম্যের উচিত জবাব দেওয়ার ভিতর দিয়ে দেশের স্বাধীনতা আনয়নে সচেষ্ট হতাম। 


ঘ) "বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের জন্য পাকিস্তান আমলের অর্থনৈতিক বঞ্চনাই দায়ী" উক্তিটি যথায। উদ্দীপক অনুযায়ী বোঝা যায়, পাকিস্তান সৃষ্টির পর থেকেই পশ্চিম পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী পূর্ব- পাকিস্তানের প্রতি বৈষম্যমূলক নীতি অনুসরণ করে আসে।


রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক, প্রশাসনিক সবদিকেই এই বৈষম্য বিরাজমান ছিল। পূর্ব-পাকিস্তানের প্রতি অর্থনৈতিক বৈষম্য এতটাই প্রকট ছিল যে, দেশের প্রধান রপ্তানি পণ্য উৎপাদিত হতো পূর্ব-পাকিস্তানে। অথচ আমদানির সুফল ভোগ করত পশ্চিম পাকিস্তান। পশ্চিম-পাকিস্তানে এ অঞ্চলের চেয়ে বহুগুণে শিল্পায়ন ঘটে। পশ্চিম পাকিস্তানি শাসকরা একচোখা মনোভাবের কারণে এখানকার কৃষিখাত অবহেলিত থাকে। দেশের অভ্যন্তরীণ সম্পদের সিংহভাগ ব্যয় হতো পশ্চিম-পাকিস্তানে। পশ্চিম-পাকিস্তান ক্রমান্বয়ে নগরায়িত হতে থাকে।


কেন্দ্রীয় রাজধানী করাচিতে থাকা বহুবিধ সুফল তারা ভোগ করতো। সরকারি চাকরি ও সামরিক বাহিনীতে বাঙালিদের সংখ্যা ছিল নিতান্তই হাতে গোনা। একের পর এক চরম বৈষম্যমূলক আচরণ করে পশ্চিম-পাকিস্তানের শাসকগোষ্ঠী পূর্ব-পাকিস্তানের জনগণের কাছে বিরাগভাজন হতে থাকে। এসব কারণে পূর্ব-পাকিস্তানের জনগণ আর্থ-সামাজিক ও রাজনৈতিক ক্ষেত্রে বঞ্চনার বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে নানা ঘটনা প্রবাহের মাধ্যমে বাংলাদেশের অভ্যুদয়কে ত্বরান্বিত করে।


বিশেষভাবে অর্থনৈতিক বৈষম্য বাঙালিদের মনে চরমভাবে দাগ কাটার ফলে বাঙালিরা সর্বশেষ সশস্ত্র সংগ্রামে (মুক্তিযুদ্ধ) লিপ্ত হয়। তাই বলা যায় বাংলাদেশের অভ্যুদয়ে পাকিস্তান আমলের অর্থনৈতিক বঞ্চনাই দায়ী।

উপসংহার

আশা করি, যারা ৭ম শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় সৃজনশীল প্রশ্ন উত্তর ১ম অধ্যায় খুঁজছিলেন তারা অনেক বেশি উপকৃত হয়েছেন। ৭ম শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় সৃজনশীল প্রশ্ন উত্তর ১ম অধ্যায়ের মত আরো অন্যান্য অধ্যায়ের সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর পেতে আমাদের ওয়েবসাইটে নিয়মিত ভিজিট করুন। ধন্যবাদ আজকের ৭ম শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় সৃজনশীল প্রশ্ন নিয়ে লেখা আর্টিকেলটি একদম শেষ পর্যন্ত পড়ার জন্য।

Post a Comment

0 Comments