৭ম শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় সৃজনশীল প্রশ্ন উত্তর ২য় অধ্যায় জানতে আজকের এই আর্টিকেলটি শেষ পর্যন্ত পড়ুন। আশা করি সপ্তম শ্রেণির পরীক্ষার্থীরা অনেক বেশি উপকৃত হবে। সপ্তম শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় বইয়ের ২য় অধ্যায়ের নাম হলো 'বাংলাদেশের সংস্কৃতি ও সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য'। যারা ৭ম শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় সৃজনশীল প্রশ্ন উত্তর ২য় অধ্যায় খুঁজছিলেন তাদের জন্য আজকের এই আর্টিকেলটি।
৭ম শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় সৃজনশীল প্রশ্নঃ ১ (২য় অধ্যায়)
হযরত খাজা মইনউদ্দিন চিশতী (র) উপমহাদেশের একজন প্রখ্যাত ইসলাম প্রচারক। তাঁর ব্যবহারে মুগ্ধ হয়ে এবং ইসলামের রীতি-নীতি দেখে অনেক নিম্নবর্ণের হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা তাঁর শিষ্যত্ব গ্রহণ করে ইসলামের ছায়াতলে আশ্রয় নেয়। তিনি সারাক্ষণ ধ্যান করতেন এবং সবাইকে শান্তির কথা বলতেন।
ক. মুসলমানদের প্রধান দু'টি ধর্মীয় অনুষ্ঠান কী কী?
খ. সব ধর্মের মূল শিক্ষা কোনটি?
গ. উদ্দীপকের হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা কেন খাজা মইনউদ্দিন চিশতী (র) এর বাণীতে আকৃষ্ট হয়? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. উদ্দীপকের খাজা মইনউদ্দিন চিশতী (র) এর মতো মানুষগুলো জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে সবার নিকট সম্মানিত- বিশ্লেষণ কর।
৭ম শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তরঃ ১ (২য় অধ্যায়)
ক) মুসলমানদের প্রধান দু'টি ধর্মীয় অনুষ্ঠান হলো- ঈদুল ফিতর এবং ঈদুল আযহা।
খ) সব ধর্মের মূল শিক্ষা হলো মানবতা। পৃথিবীতে বিভিন্ন ধর্মের মানুষ বাস করে। এদের মধ্যে কেউ মুসলমান, কেউ বৌদ্ধ আবার কেউ বা খ্রিস্টান । ধর্ম আলাদা হওয়া সত্ত্বেও প্রতিটি ধর্মের মর্মকথা এক, আর তা হলো মানবতা। সকল ধর্মের বাহ্যিক পার্থক্য থাকা সত্ত্বেও কেবল মানবিক মূল্যবোধ সব ধর্মের সব ভাষার, সব পেশার, সব মানুষের মধ্যে সম্প্রতি তৈরি করে। এ মানবিক মূল্যবোধই সব মানুষকে শান্তিতে বসবাস করতে সহায়তা করে। তাই বলা যায়, মানবিক মূল্যবোধই হলো সব ধর্মের মূল শিক্ষা।
গ. উদ্দীপকের হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা তাদের ধর্মে বর্ণপ্রথার কড়াকড়ির কারণে খাজা মইনউদ্দিন চিশতী (র)- এর সাম্যের বাণীতে আকৃষ্ট হয়। বাংলায় অধিকাংশ মানুষ প্রথম দিকে প্রকৃতি পূজারী ছিল। পরবর্তীতে বাংলায় সুফি সাধকরাই প্রধানত ইসলাম ধর্ম প্রচার শুরু করেন।
পূর্বে বাংলায় কেবল হিন্দুধর্মের উপস্থিতি থাকলেও পরবর্তীতে ধীরে ধীরে এর পাশাপাশি ইসলাম ধর্মেরও বিকাশ ঘটে। মূলত মধ্যযুগে ইরান, তুরান, আফগান থেকে আসা ভাগ্যান্বেষী মানুষের মাধ্যমেই মুসলিম সমাজের প্রসার ঘটেছে। হিন্দু সমাজে ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়, বৈশ্য ও শূদ্র এই চার বর্ণের বিভক্তি ছিল। বর্ণপ্রথার কড়াকড়ি, অস্পৃশ্যতা ইত্যাদি কারণে হিন্দু সমাজে উঁচুনিচু প্রভেদ এক সময় প্রকট আকার ধারণ করে। ফলে নিম্নবর্ণের হিন্দুরা নানাভাবে অত্যাচারিত, নির্যাতিত ও বঞ্চিত হতে থাকে। এসময় খাজা মইনউদ্দিন চিশতী (র) এর মতো ইসলাম প্রচারকরা সাম্যের বাণী নিয়ে মানব সমাজে আবির্ভূত হন। তাদের একাত্ম ও সাম্যের বাণীতে তাই তখন অত্যাচারিত নিম্নবর্ণের হিন্দুরা আকৃষ্ট হয় এবং এর মাঝেই শান্তির সন্ধান পায়।
তখনই তারা খাজা মইনউদ্দিন চিশতী (র)- এর মতো মহাপুরুষদের শিষ্যত্ব গ্রহণ করে ইসলামের ছায়াতলে আশ্রয় নিতে থাকে। সুতরাং দেখা যায়, বর্ণপ্রথার কড়াকড়ির কারণেই উদ্দীপকের নিম্নবর্ণের হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা খাজা মইনউদ্দিন চিশতী (র)-এর সাম্যের বাণীতে আকৃষ্ট হয়।
ঘ) উদ্দীপকের খাজা মইনউদ্দিন চিশতী (র)-এর মতো সাম্যের বাণী প্রচারকগণ জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকলের অনুস্মরণীয় এবং শ্রদ্ধার পাত্র। এর প্রেক্ষিতে তাই উপরোক্ত মন্তব্যটি যথার্থ তাদের মতো মহাপুরুষগণ পৃথিবীতে আবির্ভূত হন শান্তি প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে।
তাদের উপদেশ এবং সাম্যের বাণী মানুষকে চলার পথে প্রেরণা যোগায়। এ কারণেই নিম্নবর্ণের হিন্দুরা বর্ণপ্রথার কড়াকড়ির কারণে তাঁর মতো মহাপুরুষের সংস্পর্শে এসে সাম্যের বাণীতে বিশ্বাস স্থাপন করে। কেননা, তাঁদের বাণী মানুষের মনে প্রশান্তি জাগায়। মানুষ জীবন চলার পথের দিক নির্দেশনা পায় তাদের মতো সাধকদের কাছ থেকেই।
তাদের কাছে মানুষে-মানুষে কোনো পার্থক্য নেই। জাতি-ধর্ম- বর্ণ নির্বিশেষে সবাই তাদের নিকট আসতে পারে আর সহায়তাও পেতে পারে। তাঁরা মানুষকে সঠিক পথের সন্ধান দেন। মানুষকে সৌহার্দ্য, সম্প্রীতি ও শান্তির পথ দেখান। মানুষের মনের অন্ধকার দূর করে জ্ঞানের আলো জ্বালানোতেও তাদের ভূমিকা থাকে অগ্রণী। সকল মানুষকে সততা ও নিষ্ঠার শিক্ষা দিয়ে তাদেরকে আলিঙ্গন করতেও শেখান তাঁদের মতো মহাপুরুষগণ।
তাঁদের মতো সাধকদের বদৌলতেই সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠিত হয় এবং সংঘাত মিটে যায়। তাঁদের জীবনাদর্শ সকল মানুষের জীবনকে সুন্দর ও সার্থক করে তুলতে পথ প্রদর্শকের ভূমিকা পালন করে। তাই খাজা মইনউদ্দিন চিশতী (র)-এর মতো জ্ঞান সাধক ও মহাপুরুষগণ জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকলের নিকট সম্মানিত।
আরও পড়ুনঃ
- ছবির রং সৃজনশীল প্রশ্ন
- পিতৃপুরুষের গল্প সৃজনশীল প্রশ্ন
- আব্দুল কাদের জিলানী প্রবন্ধের সৃজনশীল প্রশ্ন
- এই অক্ষরে কবিতার সৃজনশীল প্রশ্ন
- লখার একুশে গল্পের সৃজনশীল প্রশ্ন
- বাংলাদেশের ক্ষুদ্র জাতিসত্তা সৃজনশীল প্রশ্ন
- আমার বাড়ি কবিতার সৃজনশীল প্রশ্ন
- সেই ছেলেটি গল্পের সৃজনশীল প্রশ্ন
- কাবুলিওয়ালা গল্পের সৃজনশীল প্রশ্ন
৭ম শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় সৃজনশীল প্রশ্নঃ ২ (২য় অধ্যায়)
পারুল গাঁয়ের মেয়ে। তাদের বাড়ির পাশ দিয়ে গোমতী নদী প্রবাহিত। এখানকার মাটি উর্বর বিধায় মানুষ কৃষিকাজ করে জীবিকা নির্বাহ করে। এছাড়াও এখানকার মানুষজন অন্যান্য পেশার সাথে জড়িত। তীরে বাড়ি হওয়ায় পারুলরা প্রকৃতির নানারকম নিষ্ঠুরতার শিকার হয়। এ গাঁয়ের মানুষের কৃষিকাজ ও সংস্কৃতি যেন সারা বাংলার প্রতিচ্ছবি।
ক. বাংলায় বসবাসকারী সব ধর্মের মানুষের মূল শিক্ষা কী?
খ. বাংলাদেশে কীভাবে মুসলিম সমাজ প্রসার লাভ করেছে?
গ. পারুলদের সমাজ ও সংস্কৃতিতে প্রকৃতির অবদান ব্যাখ্যা কর।
ঘ. বাংলাদেশের মানুষের জীবন ও জীবিকায় প্রকৃতির প্রভাব উদ্দীপকের আলোকে বিশ্লেষণ কর।
৭ম শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তরঃ ২ (২য় অধ্যায়)
ক) বাংলায় বসবাসকারী সব ধর্মের মানুষের মূল শিক্ষা হচ্ছে মানবিক মূল্যবোধ।
খ) হিন্দু ধর্মের বর্ণপ্রথার কড়াকড়ির জন্য নিম্নবর্ণের মানুষ ইসলামের সুন্দর ও সাম্যের বাণীতে আকৃষ্ট হয়ে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছে। সুফি সাধকরাই প্রধানত এদেশে ইসলাম ধর্ম প্রচার করেছেন মধ্যযুগে ইরান-তুরান, আফগান থেকে আসা ভাগ্যান্বেষী মানুষের মাধ্যমেও মুসলিম সমাজের প্রসার ঘটেছে। এভাবেই কালে কালে এদেশে বিশাল এক মুসলিম সম্প্রদায় সৃষ্টি হয় এবং মুসলিম সমাজ প্রসার লাভ করেছে।
গ. পারুলদের গাঁয়ে প্রকৃতি নিজ হাতে তার ঐশ্বর্য দান করেছে। তাই বলা যায়, পারুলদের সমাজ ও সংস্কৃতিতে প্রকৃতির ব্যাপক অবদান রাখছে।
বাংলার প্রকৃতি যেমন উদার ও দানশীল তেমনি কখনো কখনো ভীষণ খেয়ালিপনা আর নিষ্ঠুরও হয়ে থাকে। নদী ভাঙনে, অনাবৃষ্টিতে, বন্যায়, বজ্রের আঘাতে নিষ্ঠুরতা বোঝা যায়। প্রকৃতির খামখেয়ালিপনা মানুষকে জীবনের ভবিষ্যৎ ও নিজের ভাগ্য সম্পর্কে অনিশ্চয়তায় ভোগায়। এই অনিশ্চয়তা বোধ তাদের মধ্যে স্রষ্টার সঙ্গে বোঝাপড়ার নিজস্ব ধারণা তৈরি করেছে। বাংলার বাউল, ভাটিয়ালি, মারফতিসহ বিভিন্ন ধরনের লোকগানে এসব বোধের প্রকাশ ঘটেছে। গ্রামের মানুষ শাড়ি, লুঙ্গি, ধূতি, চাদরের মতো কাপড়ই পরিধান করে।
এছাড়া তারা বাঁশ, শন, মাটি দিয়েই সাধারণ তৈরি করে থাকে। পোড়ামাটির ফলক, তালপাতার পুঁথি ও ছবি, কাঠের শিল্পকর্ম, শঙ্খের কাজ, মাটির তৈরি সরা-ঢাকনা ও সখের হাঁড়ি গ্রামবাংলার সংস্কৃতির অংশ। এছাড়াও গাঁয়ের মানুষ নানা রকমের নৌকা ব্যবহার করে ঢুকে। সুতরাং বলা যায়, পারুলদের সমাজ ও সংস্কৃতিতে প্রকৃতি বিশেষ অবদান রাখছে।
ঘ. বাংলাদেশের মানুষের জীবন ও জীবিকাতে প্রকৃতির ব্যাপক প্রভাব রয়েছে । উদ্দীপকেও এর প্রভাব লক্ষ্য করা যায়। পল্লী বাংলার উর্বর মাটি স্বভাবতই মানুষকে কৃষিকাজে উদ্বুদ্ধ করে আসছে।
এছাড়া এখানকার মানুষরা কৃষি ছাড়াও মাটির কাজ, মাছ ধরা, তাঁত বোনা এসব কাজও করতো। এক সময় বাংলাদেশের মানুষের ব্যবহার্য তৈজসপত্র বেশিরভাগই ছিল মাটির তৈরি।
কৃষিকাজের মাধ্যমে তারা যে তুলা পায় তা তাদের কাপড় বুনতে উৎসাহিত করেছে। প্রচুর নদী- নালা, খাল-বিল থাকায় মাছ ধরা এদেশের মানুষের পেশা ও নেশায় পরিণত হয়েছে। এদেশের মানুষের জীবিকা কৃষি নির্ভর। এখানকার উর্বর মাটি স্বভাবতই মানুষকে কৃষিকাজে উদ্বুদ্ধ করেছে।
এছাড়া ধীরে ধীরে সমাজের প্রয়োজনে কামার, কুমার, চর্মকার, কাঠের কারিগর, স্বর্ণকার প্রভৃতি পেশার প্রসার ঘটেছে। নদীনালার দেশ হিসেবে এদেশের মানুষ ডিঙি, ছিপা, গয়না, বজরা, ময়ুরপঙ্খী, সাম্পান প্রভৃতি নৌকা চালিয়ে তারা তাদের জীবিকা নির্বাহ করে। সুতরাং বলা যায় বাংলাদেশের মানুষের জীবন-জীবিকার ওপর প্রকৃতির বিরাট প্রভাব রয়েছে।
৭ম শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় সৃজনশীল প্রশ্নঃ ৩ (২য় অধ্যায়)
শামিম কুষ্টিয়া জেলায় বাস করে। এ জেলায় প্রতিবছর লালন মেলা হয়ে থাকে। শামিম মনে করে বাংলাদেশে বিভিন্ন ধর্মের আবির্ভাব হলেও এদেশের মানুষ বরাবরই অসাম্প্রদায়িক এবং তাদের জীবনযাত্রা বৈচিত্র্যময়। এখানে সারা বছরই নানা রকমের উৎসব-অনুষ্ঠান উদযাপিত হয়। বিভিন্ন ধরনের অনুষ্ঠানে সব ধর্মের লোকের সমান অংশগ্রহণ করে থাকে।
ক. বাংলাদেশে প্রধান ৪টি ধর্মের নাম কী?
খ. বাংলার মানুষের জীবনযাত্রা বিচিত্র হওয়ার কারণ বর্ণনা কর।
গ. বাংলাদেশের সংস্কৃতিতে ধর্ম কীরূপ ভূমিকা রাখছে উদ্দীপকের আলোকে ব্যাখ্যা কর।
ঘ. উদ্দীপকে আলোচিত গ্রাম বাংলায় যেসব উৎসব ও মেলা উদযাপিত হয় তার স্বরূপ বর্ণনা কর।
৭ম শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তরঃ ৩ (২য় অধ্যায়)
ক) বাংলাদেশের চারটি ধর্ম হলো মুসলমান, হিন্দু, বৌদ্ধ ও খ্রিস্টান।
খ) বিভিন্ন নৃ-গোষ্ঠীর সংমিশ্রণে গড়ে উঠেছে বলে বাংলার জনমানুষের আকারে, অবয়বে, চেহারায় অনেকটা বৈচিত্র্য পরিলক্ষিত হয়। তাছাড়া নানা ভাষা-ভাষী শতির আগমনে এখানকার সংস্কৃতিতেও বৈচিত্র্য দেখা যায়। নদীর খেয়ালি আচরণ আর প্রকৃতির ঋতুবৈচিত্র্য বাঙালিদের সমৃদ্ধ করেছে।
গ) ধর্ম মানুষের ব্যক্তি ও সমাজ জীবনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। কোন এক সময় এদেশের অধিকাংশ মানুষ ছিল প্রকৃতি-পূজারী। তারা যেমন প্রকৃতির বড় শক্তি হিসেবে আকাশ, বাতাস, চন্দ্র, সূর্যকে পূজা করত তেমনি প্রকৃতির জীবন্ত উপাদান নদী, সমুদ্র, বৃক্ষ প্রভৃতিকেও ভজনা করেছে।
ব্রাহ্মণ্য ধর্ম প্রচারিত হওয়ার পর প্রচলিত পুরোনো দেবদেবীর সাথে আরও কিছু নতুন দেবদেবীর মূর্তি যুক্ত হয়েছে। হিন্দু ধর্মের বর্ণপ্রথার কড়াকড়ির জন্য নিম্ন বর্ণের মানুষ ইসলামের সাম্যের বাণীতে আকৃষ্ট হয়েছে। সুফি সাধকরাই প্রধানত এদেশে ইসলাম ধর্ম প্রচার করেছেন এর ফলে কালে কালে এদেশে বিশাল এক মুসলিম সম্প্রদায় তৈরি হয়েছে। তবে প্রাচীন কৃষিভিত্তিক গ্রামীণ সমাজের ধারাবাহিকতায় হিন্দু-মুসলিম সম্প্রদায় এদেশে পাশাপাশি শান্তিতে বসবাস করে আসছে।
বৌদ্ধরা গৌতম বুদ্ধের জীবনকে ঘিরে বৈশাখী পূর্ণিমায় উৎসবমুখর অনুষ্ঠানের আয়োজন করে থাকে। খ্রিস্টানরা যিশুখ্রিস্টের জন্মদিনে বা বড়দিনে বড় আয়োজন করে। এসব অনুষ্ঠানে অন্যান্য সম্প্রদায়ের আমন্ত্রিত হয়। এছাড়াও এ দেশের ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর মানুষও নানা ধর্মীয় ও সামজিক উৎসবে মেতে ওঠে।
ঘ) সারা বছরই গ্রাম বাংলায় বিভিন্ন ধরনের উৎসব- অনুষ্ঠান হয়ে থাকে। ধর্মীয় উৎসব ছাড়াও এদেশে নবান্ন, নববর্ষ ইত্যাদি অনুষ্ঠান উদযাপিত হয়ে থাকে। এছাড়াও আছে নানা উপলক্ষে অসংখ্য মেলা। এসব মেলার নব্বই ভাগই গ্রামীণ মেলা।
বিভিন্ন ধর্মের লোক ও নৃ-জাতিগোষ্ঠীসহ সকল সম্প্রদায়ই এসব মেলার আয়োজন করে থাকে। এক ধর্মের মেলায় অন্য ধর্মের লোকজন বেচাকেনা করতে যায়। কিছু কিছু মেলা রয়েছে যেগুলো সবাই মিলে সামাজিকভাবে আয়োজন করে।
মেলায় জিনিসপত্র পণ্য-দ্রব্য বেচাকেনার উদ্দেশে যাত্রা, থিয়েটার, পাঁচালি, কবিগান, কীর্তন, বাউলগানের আয়োজন করা হয়ে। অনেক মেলায় আবার নাগরদোলা, ম্যাজিক, লাঠিখেলা, কুস্তি, পুতুল নাচ, বায়োস্কোপ ইত্যাদি থাকে।
ইদানীং সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে নানা রকম বাণিজ্যিক ও সাংস্কৃতিক মেলাও হচ্ছে। উপরন্ত বিশিষ্ট বরেণ্য মনীষীদের স্মরণেও মেলার আয়োজন করা হয়।
৭ম শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় সৃজনশীল প্রশ্নঃ ৪ (২য় অধ্যায়)
লোকসংস্কৃতি ও জাতীয় সংস্কৃতি উভয়ে পারস্পরিক সম্পর্কযুক্ত। কোনো জাতীয় সংস্কৃতি সে জাতির বিভিন্ন সংস্কৃতি নিয়ে গড়ে ওঠে। এ প্রেক্ষিতে বলা যায় লোকসংস্কৃতি হল জাতির সংস্কৃতির উপাদান।
ক. জাতীয় সংস্কৃতি কী?
খ. ধর্ম বিচারে জাতীয় সংস্কৃতি ব্যাখ্যা কর।
গ. উৎসব বিচারে লোকসংস্কৃতি ও জাতীয় সংস্কৃতির পার্থক্য বর্ণনা কর।
ঘ. “সব ধরনের লোকসংস্কৃতিই একত্রিত হয়ে জন্ম দেয় জাতীয় সংস্কৃতির।" – বিশ্লেষণ কর।
৭ম শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তরঃ ৪ (২য় অধ্যায়)
ক) একটি দেশের অধিকাংশ মানুষ সম্মিলিতভাবে যে সংস্কৃতি লালন করে সাধারণ অর্থে তাকেই জাতীয় সংস্কৃতি বলে।
খ) এদেশের সকল ধর্মের মানুষ স্বাধীনভাবে যার যার ধর্ম- সংস্কৃতি পালন করতে পারবে। এর ফলে মুসলমান, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান প্রত্যেক ধর্মের মানুষই যার যার মতো ধর্ম পালন করে। অধিকাংশ মুসলিম দেশগুলোতে এমনটি দেখা যায় না। আমাদের দেশেই ধর্মীয় মনোভাবের ব্যাপারে প্রত্যেক ধর্মের মানুষের নিজস্ব স্বাধীনতা রয়েছে।
গ) উৎসব বিচারে লোক ও জাতীয় সংস্কৃতির পার্থক্য পরিলক্ষিত লোকসংস্কৃতি ও জাতীয় সংস্কৃতিতে পার্থক্য লোকসংস্কৃতিতে যে সকল উৎসব পালিত হয় তা প্রধানত ধর্মীয় অনুষ্ঠান ও ঋতুভিত্তিক। কিন্তু জাতীয় সংস্কৃতি হলো জাতীয় পর্যায়ের অন্তর্ভুক্ত।
সমস্ত জাতিকে এই সংস্কৃতি পালন করতে হয়। তাই লোকসংস্কৃতি থেকে তৈরি হলেও জাতীয় সংস্কৃতির ধারা কিছুটা ভিন্ন। জাতীয় সংস্কৃতিতে লোকসংস্কৃতির উৎসব থাকলেও এখানে আরো কিছু ব্যতিক্রমী উৎসবও থাকে। এদের মধ্যে রয়েছে জাতীয় এবং আন্ত র্জাতিক পর্যায়ে বিভিন্ন দিবস উদযাপন।
যেহেতু লোকসংস্কৃতি লোকসমাজের পর্যায়ে এবং জাতীয় সংস্কৃতি জাতীয় পর্যায়ে তাই এদের নিজস্ব ধারা অনুযায়ী চলতে গিয়ে এ দু'টিতে পার্থক্য পরিলক্ষিত হয়।
ঘ) সকল ধরনের লোকসংস্কৃতিই একত্রিত হয়ে জন্ম দেয় জাতীয় সংস্কৃতির। লোকসংস্কৃতি বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন রকম।
এদের মধ্যে যেমন কম কুসংস্কারাচ্ছন্ন ও যৌক্তিক এবং প্রায় সকলের নিকট গৃহীত তা থেকে জন্ম হয় আরেক নতুন সংস্কৃতি। কোন কোন সময়ে মানুষের উক্ত মনোভাব পরিশীলিত ও পরিবর্তিত হয়ে তৈরি হয় নতুন লোকসংস্কৃতির।
এমন লোকসংস্কৃতিই অধিকাংশ মানুষ ব্যবহার করে তার ধারাকে ধারণ করে রাখে। ধীরে ধীরে সেই পরিবর্তিত লোকসংস্কৃতি সমস্ত জাতির মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে এবং সেটি জাতীয় পর্যায়ভুক্ত হয়। বেশির ভাগ মানুষের অধিক গৃহীত, পরিবর্তিত, সেই লোকসংস্কৃতি তখন জাতীয় সংস্কৃতিতে পরিণত হয়। এই জাতীয় সংস্কৃতিতে জাতির এবং আন্তর্জাতিক আরো কিছু সংস্কৃতি যোগ হয়ে জাতীয় সংস্কৃতির রূপ পাল্টে যায়।
সকল ধরনের লোকসংস্কৃতির সমন্বয়ে তৈরি পরিবর্তিত জাতীয় সংস্কৃতিই হয় জাতির সংস্কৃতি। তাই বলা যায় যে, সকল ধরনের লোকসংস্কৃতিই একত্রিত হয়ে জন্ম দেয় জাতীয় সংস্কৃতির।
উপসংহার
আশা করি, যারা ৭ম শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় সৃজনশীল প্রশ্ন উত্তর ২য় অধ্যায় খুঁজছিলেন তারা অনেক বেশি উপকৃত হয়েছেন। ৭ম শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় সৃজনশীল প্রশ্ন উত্তর ২য় অধ্যায়ের মত আরো অন্যান্য অধ্যায়ের সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর পেতে আমাদের ওয়েবসাইটে নিয়মিত ভিজিট করুন। ধন্যবাদ আজকের ৭ম শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় সৃজনশীল প্রশ্ন নিয়ে লেখা আর্টিকেলটি একদম শেষ পর্যন্ত পড়ার জন্য।
0 Comments